ধান কাটার মেশিন নিয়ে দুর্ভোগের অভিযোগ

মো.জুয়েল মিয়া,আখাউড়া প্রতিনিধিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কৃষকদের গলার কাটা হয়েছে ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। অর্থের দিক দিয়ে অনেক বেশি হলেও সম্পূর্ণ নিম্নমানের মেটালের হারভেস্টার মেশিন গুলো এমনটাই দাবি করছে আখাউড়ার কৃষক।সরকার কৃষিকে লাভবান ও কৃষকের জীবন মান উন্নত করতে অত্যন্ত উদারভাবে কৃষকদেরকে সার, বীজ, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে ৭০% ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ বিভিন্ন যন্ত্র কৃষকদেরকে দিচ্ছে।

কিন্তু কৃষকের স্বপ্নে ভাঙ্গন তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষক তাহের মিয়া জানান, সরকার আমাকে ১০ লক্ষ টাকার উপরে ভর্তুকি দিয়েছে। তার সাথে আমার নিজস্ব ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে মেশিন নিয়েছি। তারপর প্রথমে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের তন্তর এলাকায় ধান কাটার জন্য পাঠিয়েছি। সেখানে প্রথম দিন ভালোভাবে ধান কাটা সম্পন্ন করতে পারলেও দ্বিতীয় দিন মেশিনের সমস্যা দেয়। ফিল্টারের এটা ঠিক করতে করতে ধান কাটার সিজন চলে যায়। কাঁচি নষ্ট হয় আবার ঠিক করি, আবার নষ্ট হয় আবার ঠিক করি। চাকার সমস্যা দেখা দেয়, রাবারের সমস্যা দেখা দেয়। বারংবার ইঞ্জিনের সমস্যা হয়।কাজে লাগার একটা একটা করে সমস্ত যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করছি। তারপরেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।এ পর্যন্ত ১০ টাকা ও পকেটে রাখতে পারিনি। এখনো মেশিন নির্বিকার পড়ে আছে। এটা দিয়ে আমি কোন কাজ করতে পারছিনা। আমার মনে হয় এর চেয়ে প্লাস্টিকের খেলনা গাড়ি ভালো আছে। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে মেশিন নিয়ে যান‌। এটা এখন আমার গলার কাঁটা হয়ে গেছে। না পারছি এটা দিয়ে কোন কাজ করতে, না পারছি মানুষ কে সন্তুষ্ট করতে।২০ লক্ষ টাকার মেশিন এ পর্যন্ত ২০ টাকা ইনকাম করতে পারছি না।এখন কিস্তি দিব কিভাবে। আমি গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ বাকি থাকবেনা।

গত এক বছর পূর্বে মেটালের আরোও একটি কম্বাইন হারভেস্টার নিয়েছিলেন আখাউড়ার অপর এক কৃষক নাসির উদ্দিন বাচ্চু। তিনি জানান, কৃষিবান্ধব সরকার প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবলিককে যে সকল মেশিন দিচ্ছে এগুলো আরও উন্নত হওয়া উচিত। এগুলো দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা যাচ্ছে না। মেশিন নেওয়ার সময় কোম্পানি আমাকে জানিয়েছে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারবো। কিন্তু এখন সর্বোপরি পাঁচ থেকে ছয় বিঘা জমির ধান কাটতে পারছিনা। এক ঘন্টা মেশিন চালু রাখলে পরবর্তী এক ঘন্টা মেশিন বন্ধ রাখতে হয়। বর্তমানে করোনা কালীন সময়ে শ্রমজীবী মানুষের খুব অভাব। এই সময়ে হারভেস্টার মেশিন গুলো খুব প্রয়োজন কৃষকের জন্য। কিন্তু বর্তমান মেশিনটা দিয়ে কোন ভাবেই কাজ চালানো সম্ভব নয় বিধায় এটা নিয়ে উন্নত মানের মেশিন দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন।

এ বিষয়ে মেটাল কোম্পানির ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিজিওনাল ম্যানেজার আব্দুর রশিদ জানান, আমাদের কসবা আখাউড়া নবীনগর মিলিয়ে অনেকগুলো গাড়ি আছে। এছাড়া উনাদের গাড়িটা সমস্যা দিচ্ছে। আমরা সার্ভিস দিচ্ছি। তবে উনাদের পেমেন্ট ঠিক না।তারপরও আমরা ভালো সার্ভিস দিচ্ছি‌। মেকানিক্যাল জিনিস ডিস্টার্ব হতে পারে এটা আমরা স্বীকার করি। তবে আমাদের সার্ভিস দিচ্ছি পর্যাপ্ত। উনি কিন্তু গাড়িটা চালিয়ে ইনকাম করেছে। কোম্পানিকে যে টাকাটা দেওয়ার কথা উনি সেটা দেয় নাই। এমন তো না যে আমরা ১ থেকে ২ টা মেশিনে বিক্রি করেছি। আমরা তো অনেকগুলো মেশিন বিক্রি করেছি। সিজনের সময় মিস্ত্রি না পাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, গাড়ি যেকোনো জায়গায় ডিস্টার্ব হতে পারে। এটা তো টোটাল চায়নার। সে আমাদেরকে জানায়নি যে তার গাড়ি বসা দুইদিন যাবত। যেদিন ফোন দিয়েছিল ওইদিন অন্য সাইটে ছিল। পরবর্তী দিন মিস্ত্রি আসছে। উনি যে কথাগুলো বলেছে এর মধ্যে সত্য ও আছে মিথ্যা ও আছে। পুরোপুরি কাজ করে নাই তাও না।গত এক বছরে ওনার গাড়ি ৭৪৩ ঘন্টা চালানো হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির গাড়ি গুলো ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড ১৯৮৩ সাল থেকে বিজনেস করছে। গত ২ থেকে ৩ বছর পূর্বে হারভেস্টার বাংলাদেশে এসেছে। কৃষকের বাড়িতে আরো অন্য কোম্পানির নষ্ট মেশিন রয়েছে বলে দাবি করেন রিজিওনাল ম্যানেজার। মেকানিক্যাল জিনিস মেশিনের দক্ষ কোন ড্রাইভার নেই। কোম্পানি থেকে গাড়ি নেওয়ার সময় দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ড্রাইভারকে। এই প্রশিক্ষণ তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। পাকাপোক্ত ড্রাইভার এর গাড়ি খুব কমই সমস্যা দেখা দিচ্ছে ।

এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, গতবছর উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে নন হাওর এলাকায় তিনটি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করি। এর মধ্যে একটি কপোতা কোম্পানির এবং অপর ২ টি মেটাল কোম্পানির এফএম ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড মেটাল ব্র্যান্ডের। যেগুলো আমরা বিতরণ করেছি প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যে কৃষকরা এটি ক্রয় করেছেন তারা ভালো সার্ভিসিং দিতে পারছ না। ভবিষ্যতে এই সকল যন্ত্র কৃষকের মাঝে না পৌঁছানো ভালো ও মঙ্গলকর হবে বলে আমি মনে করি।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে