যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশে স্বাধীনতা আছে দেশের প্রেসিডেন্টকেও

যুক্তরাষ্ট্রের বহু কিছু আমার ভালো লাগে না। বলতে গেলে দেশটার প্রতি আমার কোন মোহ নেই। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের একটা জিনিষ আমার দারুণ লাগে। সেটা হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সেখানে সবাই মন খুলে কথা বলতে পারে। দেশের প্রেসিডেন্টকেও উচিত কথাটা বলতে পারে একজন পুলিশ বা সাংবাদিক।

এই যে দেখেন, যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ সমাবেশ দমনে পুলিশকে কঠোর হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পৃথিবীর বহু দেশে এমন কথা শুনে পুলিশ নাগরিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। কিন্তু টেক্সাস রাজ্যের হিউস্টন নগরীর পুলিশ প্রধান আসিভেদো উল্টো প্রেসিডেন্টকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, আপনি যদি গঠনমূলক কিছু না বলতে পারেন, তাহলে দয়া করে নিজের মুখ বন্ধ রাখুন। কারণ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে পূর্ণশক্তি প্রয়োগ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং এটা আন্দোলনকারীদের হৃদয় ও মন জয় করার ব্যাপার।

আমি শুধু ভাবছি কথাটা সাহস থাকলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এমন কথা বলতে পারেন। বাংলাদেশে হলে তো ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলা হয়ে যেত। সৌদি আরব, উত্তর কোরিয়া বা চীন হলে তো ফাঁসি।

সম্প্রতি আমেরিকা থেকে আসা এক সংবাদিক বড় ভাই বলছিলেন, হোয়াইট হাউসের সামনে সারাক্ষণ প্রেসিডেন্টকে গালিগালাজ করছে লোকজন। সবসময় চলে নানা বিক্ষোভ। দেশটির গণমাধ্যম প্রেসিডেন্টকে ধুয়ে দিচ্ছে। টেলিভিশন টকশো, কার্টুনে যা ইচ্ছে তাই করা যায়।

এই যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেটা কিন্তু একটা দেশের বিরাট শক্তি। শুধুমাত্র এই মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণে, কথা বলতে না পারার কারণে প্রচুর সম্পদ থাকার পরেও ধ্বংস হয়ে গেছে লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাকসহ আরও অনেক দেশ। মধ্যপ্রাচ্যসহ আজকের অনেক দেশেই এই সংকট। এমনকি বাংলাদেশেও এই সংকট কম-বেশি আছে।

প্রেসিডেন্ট তো পরের কথা বাংলাদেশে একজন তরুণ সরকারি কর্মকর্তা কী সাহস করে তার বসের কোন অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারবেন? তাকে শুনতে হবে বেয়াদব। এসিআরে খবর আছে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা নাই বললাম। অবশ্য ব্যতিক্রম আছে কিছু। কিন্তু সাধারণভাবে আমরা বেশিরভাগ মানুষ ভিন্নমত নিতে পারি না।

শুধু ভিন্নমত মরতে পারি না তাই নয়, আমরা সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারি না। আমরা সারাক্ষণ অন্যের নিন্দা বা পরশ্রীকাতরতায় যতটা মেতে থাকি কিংবা ক্ষমতাশালীদের তেলবাজিতে হোক সে অফিসের বস কিংবা পাড়ার নেতা, সে তুলনায় সত্য কথাটা সাহস করে আমরা বলতে পারিনা, লিখতে পারি না। আযমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি আরেকজন বলবে।

একটা কথা মনে রাখবেন, রাষ্ট্র আপনাকে যদি সবও দেয়, এমনকি কোটি টাকা, কিন্তু যদি আপনাকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে বা মত প্রকাশের সুুযোগ না দেওয়া হয়, আপনি সবসময় ক্ষুব্ধ থাকবেন। ভেতরে ভেতরে মরে যাবেন। ভয়ে থাকবেন। সাদ্দাম, গাদ্দাফি কিন্তু এই কারণেই ডুবেছে।

আমি সবসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের উক্তিটি আমি খুব বিশ্বাস করি। ‘আমি তোমার কথার সাথে বিন্দুমাত্র একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য আমি জীবন দেবো৷’ আসলেই তাই। আমি মনে করি মত প্রকাশের এই স্বাধীনতাই আজকের উন্নত পৃথিবী বা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি।

লেখক-সাংবাদিক ও কলামিস্ট শরিফুল হাসান

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে