মো.জুয়েল মিয়াঃ
যারা আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল তারা চিকিৎসা নেয় জেলা শহর কিংবা দেশের নামকরা উন্নত হাসপাতালে।কিন্তু গ্রামের খেটে খাওয়া শ্রমিক,দিনমজুর ও অসহায় মানুষের চিকিৎসা নেয়ার প্রধান ও একমাত্র আশ্রয়স্থল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।এমন ও গরীব রোগী আসে যাদের জেলা শহরে যাওয়ার মতো গাড়ি ভাড়াটুকু ও থাকেনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সাধারণ মানুষের যেন অভিযোগের শেষ নেই।
ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা সবই করতে হয় বাহিরের বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক থেকে।সরকারী ডাক্তারদের দেখা যায় বেসরকারী বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যস্ত সময় পার করছে।হাজিরা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উদাও হয়ে যায় অধিকাংশ চিকিৎসক। পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হলেই ওই সব ক্লিনিকে রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হয়।বেশিরভাগ সময় দেখা যায়,কোনো রকম প্রয়োজন ছাড়াই শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের নেশায় অসংখ্য পরীক্ষা আর ঔষুধের লম্বা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয় কর্তব্যরত ডাক্তাররা।পরীক্ষা করাতে গিয়ে দেখা যায় ওই ক্লিনিকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরীক্ষা করানো সহ রুগী দেখছেন সরকারী হাসপাতালের সেই চিকিৎসকই।এতে নিরুপায় হয়ে যায় অসহায় রোগীরা।সিন্ডিকেটের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হয় হতভাগা রোগীরা।
কিছুদিন আগে সাদ্দাম নামে এক সংবাদকর্মীর আপন ছোট ভাইয়ের মাথায় একজন অদক্ষ নামধারী ডাক্তার দিয়ে দায়সারা ভাবে সেলাই করে।যা পরবর্তীতে ইনফেকশন হয়ে যায়।
তাছাড়া নার্স জর্না বেগমের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুল চিকিৎসায় নবজাতক হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ।লাগামহীনভাবেই চলছে তাদের কাজ, দেখার যেন কেউ নেই।
রোগীদের নিন্ম মানের অপর্যাপ্ত খাবার দেয়ার অভিযোগ ও পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি কবে চালু ছিলো তা সাধারণ মানুষের জানা নেই।কারন এখানে শেষবার কখন এক্স-রে করেছিলেন তা কেউ বলতে পারে না। গতবছর প্রবীণ এক আওয়ামীলীগ নেতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে আসলে কোন ইসিজি মেশিন না থাকায় প্রাথমিক ভাবে সঠিক কোন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি মারা যান। তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তাৎক্ষণিক এই হাসপাতালে একটি ডিজিটাল ইসিজি মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন।সাধারণ মানুষ যাতে সঠিক ভাবে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু নানান অযুহাত দেখিয়ে ইসিজি মেসিনটির সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ এখনো বঞ্চিত হয়ে আছে । হাসপাতালের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের ইসিজি মেশিনের কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ইসিজি মেশিনের পেপার নেই তাই ইসিজি করা হয় না।
গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের রাকিব ভুুঁইয়া তার চাচাকে হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে দ্রত ইসিজি করতে বলে। তখন চিকিৎসকের নিকট জানতে চাইলে চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে ইসিজি হয় না,আপনি বাহিরে থেকে করে নিয়ে আসেন। রাকিব ভুঁইয়া কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, তখন রোগীর অবস্থা এমন পর্যায়ে ছিলো তাকে গাড়ীতে উঠানো কিংবা নামানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। আমরা ওনাকে বাহিরে ইসিজি করে নিয়ে আসতে আসতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। আমার চাচাকে বাচাঁতে পারি নাই,হয়ত তখন হাসপাতালে ইসিজিটা করে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দিতে পারলে আমার চাচা বেঁচে যেত।এমন অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নাই কোনো মাথা ব্যাথা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগ থাকলেও হাতে গুনা কয়েকটি পরীক্ষা ছাড়া সব ধরনের পরীক্ষা বাহির থেকেই করতে হয়। যা একজন সাধারণ গরিব মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
ঔষধ বলতে খবার স্যালাইন,প্যারাসিটামলসহ কয়েকটি ঔষুধ ছাড়া অন্য কোন ঔষধ পাওয়া যায় না।
হাসপাতালে বেড ও ওয়ার্ড গুলা এতটা নোংরা,ব্যবহার অনুপযোগী ও অপরিষ্কার অবস্থায় রয়েছে একজন সুস্থ মানুষ আসলে ও অসুস্থ হয়ে যাবে। রোগীদের দেখতে আসা স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, আমরা আমাদের অসুস্থ স্বজনদের দেখতে আসলে হাসপাতালের ওয়ার্ড গুলাতে দুর্গন্ধে বুমি আসার উপক্রম হয়।
হাসপাতালের পুরুষ আর মহিলা ওয়ার্ডের বেশিরভাগ লাইট ফ্যানই নষ্ট হয়ে আছে। চিকিৎসকদের চেম্বারে রোগীদের থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকের ও ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতি দেখা যায় বেশি। তাতে দেখা যায় সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা নিতে সমস্যায় পরতে হয় ।
অনেক দিন যাবত উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা হাসপাতালের নতুন ভবনের রিসিপশনে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এটা যেন কোন ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিন ।
হাসপাতালে দায়িত্ব থাকা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়মিত উপস্থিত থাকার অভিযোগ। ওনি প্রতি বুধবার ঢাকা চলে যায় আসেন রবিবারে। মাঝখানে বৃহস্পতিবার ও শনিবার ছুটি না নিয়েই তিনি ছুটিতে থাকেন।
হাসপাতালের অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে কথা বললে সংবাদকর্মীদের সাথে দূর্ব্যবহার করে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দয়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ ছাড়া কোন কথা বলা যাবে না। এই সব বিষয় নিয়ে আমি কোন কথা বলতে পারব না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নতুন ভবন কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ভবনটি আমাদের কাছে এখনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করেনি।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নজর দেয়া নিয়ে ও প্রশ্ন তুলছে ভুক্তভোগী রোগীরা।
এ বিষয়ে আখাউড়া-কসবার সংসদ সদস্য ও মাননীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সজাগ দৃষ্টি দেয়া সহ সহযোগিতা কামনা করেন আখাউড়ার সাধারণ জনগন।