প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ঢামেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক ফাহিম

মোঃজুয়েল মিয়া,সম্পাদক,বিডি কণ্ঠঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ধারালো ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে ফাহিম(১৮)নামে ১ যুবক। গুরুতর আহত ফাহিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চান্দপুর(পূর্ব পাড়া,চৌধুরী বাড়ি)গ্রামের বাদল চৌধুরীর ছেলে।

জানা যায়,মঙ্গলবার (৯জুন)মৃত নোয়াব চোধুরীর ছেলে ফারুক চৌধুরীর জায়গায় জোর পূর্বক সীমানা ওয়াল উঠাইতে গেলে সীমানা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আছিয়া খানম(৪৫)এর ভাড়াটে লোকজন ফারুক চৌধুরীকে মারপিট করে আহত করে।পরবর্তীতে ফারুক চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় আছিয়া খানমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়।এতে আছিয়া খানমের লোকজন ক্ষীপ্ত হয়ে বুধবার(১০জুন)সকাল ১০ টার সময় চৌধুরী বাড়ির পুকুরের পূর্ব পাড়ের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়িতে আসার পথে ফাহিমকে ঘিরে ফেলে আছিয়া খানমের ভাতিজা বাঁধন ও তার ভাড়াটে লোকজন ।কিছু বুঝে উঠার আগেই পিছন দিক থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে ফাহিমের পেটে সজোরে ঘাই মারে একই এলাকার রতন মিয়ার ছেলে বাঁধন মিয়া(২১)।বাঁধনের ছুরিকাঘাতে ফাহিমের পেটের এপার ওপার ছিদ্র হয়ে যায়।বাঁধনের বাঁকি সহযোগীরা হকিষ্টিক,লোহার শাবল,লোহার পাইপ,কাঠের রুল দিয়ে ফাহিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।

খবর পেয়ে স্থানীয়রা গুরুতর আহত ফাহিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফাহিমের অবস্থার অবনতি দেখে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করেন।

এ ঘটনায় আহত ফাহিমের পিতা বাদল চৌধুরী বাদী হয়ে রতন মিয়ার ছেলে বাঁধন মিয়া(২১) ও মৃত আমির খানের স্ত্রী আছিয়া খাতুন(৪৫) সহ ১৫ জনকে আসামী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার(১২জুন)সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,আছিয়া খাতুনের নবনির্মিত দালানের ছাদটির প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পাশের সড়কের উপরে চলে আসছে।তাছাড়া তার বাড়িতে উঠার সিঁড়িটার ২ ফুটের মতো অংশ রাস্তায় চলে এসেছে।যার ফলে এলাকাবাসী ও পথচারীদের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছিল।সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দালানের ছাদের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।কিন্তু আছিয়া খানম গ্রামের গণ্যমান্য লোকদের কারো কথায় কর্ণপাত করছে না।
এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে ঝগড়া হয় আছিয়া খানমের।
উক্ত সমস্যাটি খুব শিঘ্রই গ্রামের সাহেব সর্দার,মেম্বার,ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে নিয়ে শালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।তবু কাউকে পরোয়া না করে সে তার দালানের ছাদের একটা অংশ রাস্তার যায়গার উপর নিয়ে আসে।যার ফলে স্থানীয় লোকজনের সাথে আছিয়া খানমের ঝগড়া হয়।

আহত ফাহিমের বাবা বাদল চৌধুরী জানায়,”কয়েককদিন পরপর ওয়াল করে জায়গা বাড়ায় আছিয়া।এখন যখন রাস্তার উপর ওয়াল দিয়ে আবারো জায়গা বাড়াইতেছিল তখন আমরা বাধা দিয়ে বলি তোমার ওয়ালের পর আর জায়গা নাই।তারপর সে তার ভাড়াটে লোক এনে আমাদের উপর আক্রমণ করে।পরেরদিন যখন আমার ছেলে ফাহিম মাছ বাজারে যাচ্ছিল তখন আছিয়ার ভাইয়ের ছেলে বাঁধন ধারালো ছুরি দিয়ে ফাহিমের পেটে আঘাত করে আর বাচ্চু মিয়ার ছেলে আল আমিন(২৩)ফাহিমকে শক্ত করে জাপটে ধরে রাখে। আজ তিন দিন(৭২ ঘন্টা)হয়ে গেছে তবু ফাহিমের জ্ঞান ফিরেনি।এখন পর্যন্ত ৪০ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে ফাহিমকে।আছিয়া খানম তার ভাড়া করা লোক দিয়ে আমার ছেলের উপর নৃশংশ হামলা চালিয়েছে।সরকারের কাছে আমার ছেলের উপর নৃশংশ হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়,আছিয়া খানম খুব খারাপ চরিত্রের মহিলা।এলাকার নেশাখোর,বখাটে ও সন্ত্রাস প্রকৃতির ছেলেদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অপকর্ম করায় সে।মারামারি,হামলা করা সহ যেকোনো কাজে এসব ছেলেদের ব্যবহার করে সে।মেম্বার,চেয়ারম্যান কারো পরোয়া করেনা আছিয়া খানম।আছিয়া খানম মোবাইলে ফোন দিয়ে ডাকার সাথে সাথে মুহূর্তের মধ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছুটে আসে তার ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনীরা।চান্দপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ির লোকজন যেন তার কাছে জিম্মি।
এ বিষয়ে মাছিহাতা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মঙ্গল মিয়া জানান,”আছিয়া খানম তার বিল্ডিং এর উপরের ছাদ বাড়াইয়া রাস্তার মধ্যে নিয়ে আসে।এতে স্থানীয় লোকজন বাধা দেয় আছিয়াকে।তার প্রেক্ষিতে আছিয়া আলাদা মানুষ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে মারামারি করেছে বাধাদানকারীদের সাথে।পরবর্তীতে মাছিহাতা ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উক্ত ঘটনাটির বিচার করার আশ্বাস দেয়।ঐ রাতে পুলিশ এসে ঝগড়া না করে শান্তি শৃঙ্খলর বজায় রাখার জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পরেরদিন সকালেই আছিয়ার ভাতিজা বাঁধন ফাহিমকে ছুরিকাঘাত করে।
আহত ফাহিম বেঁচে সুস্থ হওয়ার পর উভয়পক্ষের ন্যায় অন্যায় দেখে বিচার করা হবে।অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে এবং অন্যায়কারীর বিচার আমরাও চাই।”

এ বিষয়ে মাছিহাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম(আলামিন)বলেন,”আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় থাকার কারনে ঘটনাটি ঘটেছে।যদি সুস্থ থাকতাম পরবর্তীতে ঘটনাটি ঘটতো না।যেকোনো মূল্যে সমাধান হতো।ফাহিমকে ছুরিকাঘাতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।সরকার এবং প্রশাসন যেন এটার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়।আমি চাই এটার আইনগত ব্যবস্থা হোক।”

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম আহমেদ জানান,”মামলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে