মোঃজুয়েল মিয়া :
গলায় ফুলের মালা।পুরো প্রাইভেটকারের উপর ফুল ছিটানো।১০-১২ টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি প্রাইভেটকারে দলবল নিয়ে এলাকায় শোডাউন।একনজরে দেখে মনে হবে কোনো জনপ্রতিনিধি হয়তো অনেকদিন পর এলাকায় আসছে।এইজন্য তার কর্মী সমর্থকরা আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করছে।অথবা নতুন বউ নিয়ে বর আসছে শ্বশুরবাড়ি থেকে। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে একজন শিশু ধর্ষণচেষ্টাকারী বয়সের অযুহাতে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় এসে এমন চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।এতে পুরো এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।লোকজন বলছে কতো বড় নির্লজ্জ ও কাণ্ডজ্ঞানহীন অমানুষ হলে এমন নেক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে।
খবর নিয়ে জানা যায়,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দক্ষিণ ইউনিয়নের হিরাপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির বাসিন্দা মো.মতিউর রহমান ওরফে মুক্ত মিয়া(৬৫) শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামী।গত ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পায় সে।আগাম জামিন নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আখাউড়ায় আসে সে।তখন তার আইনজীবী ছেলে মিলনের নেতৃত্বে তার স্বজন ও সমর্থকরা ১০-১২টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি প্রাইভেটকার নিয়ে পুরো এলাকায় শোডাউন দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে।গাড়ি থেকে নামার পর তাকে সোনা-রুপার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে ঘরে তুলেন তার পরিবারের লোকজন।
এ ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।সচেতন মহল বলছে,‘বিচারাধীন ধর্ষণ মামলার আগাম জামিন নিয়ে এসে এগুলো করা ঠিক নয়।এতে সমাজে নেতিবাচক বার্তা যাবে।অর্থ আর ক্ষমতার প্রভাবে যদি ধর্ষণ মামলার আসামীরা পার পেয়ে যায় তাহলে আইনের শাসন ও বিচারব্যবস্থার উপর জনগন আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
জানা যায়,নির্যাতনের শিকার ৮ বছরের এতিম শিশুটি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে গত তিন-চার বছর ধরে মামার বাড়ি হীরাপুর গ্রামে থাকে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি।গত ১৫ জুলাই সকালে মজা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে একটি পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন প্রতিবেশী মুক্ত মিয়া। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মুক্ত মিয়া পালিয়ে যায়। বিষয়টি এলাকার সাহেব সর্দারগনদের জানিয়ে বিচার চান শিশুটির মামা। তারা মীমাংসা করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন এবং এ ব্যাপারে কোনো মামলা না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বিচার না পেয়ে গত ১৭ আগস্ট শিশুর মা মুক্ত মিয়াকে আসামি করে আখাউড়া থানায় মামলা করেন।
হীরাপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘মুক্ত মিয়া জামিন পেয়ে এলাকায় এলে তার অ্যাডভোকেট ছেলে কয়েকটা প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিয়ে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দেয়। কিন্তু আমরা কেউ যাইনি। মুক্ত মিয়া যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানাই। এত নিকৃষ্ট ঘটনা আমরা আগে কখনো শুনিনি। এর বিচার না হলে দেশে আইন বলে কিছু থাকবে না।’
নির্যাতিত শিশুর মা বলেন, ‘আসামি আগাম জামিন পেয়ে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ওরা আমাদের হুমকিধমকি দিচ্ছে।আমরা আতঙ্কে আছি।আমি চাই আসামীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্ত মিয়ার ছেলে আইনজীবী মিলন মিয়া বলেন, ‘আমার বাবাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে। হাইকোর্ট আমার বাবার বয়স বিবেচনা করে জামিন দিয়েছে। ’ অভিযুক্ত ধর্ষণ মামলার আসামী মুক্ত মিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।’
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার ওসি রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, ‘মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।’