কুরবানির আর বাকি অল্প কিছুদিনের মতো। বর্তমান সময়ে চাকুরিজীবি-স্বচ্ছল বেশির ভাগ মানুষের উপরই কুরবানি ওয়াজিব। চলুন জেনে নিই কুরবানি কার উপর ওয়াজিব সে সম্পর্কে
কুরবানি ঈদের প্রথম দিন, অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যে কেউ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারি হয় তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। নিসাবের পরিমাণ সম্পদের হিসাব হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদের মূল্যমান ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া। টাকার এই পরিমাণটা উল্লেখ করেছি দেশের বর্তমান সময়ে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সাথে মিলিয়ে। কারো যদি এই পরিমাণ ক্যাশ টাকা, বা এই পরিমাণ টাকার সমমূল্যের স্বর্ণ বা রূপা অথবা এই মূল্যের জমিজমা-ফ্ল্যাট ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।
কারো উপর কুরবানি ওয়াজিব কিনা সেটা চেক করার সিস্টেম হচ্ছে আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত থাকা জমিজমা, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদির বিক্রয়মূল্য (এখন বিক্রি করতে গেলে যত মূল্য হয়) বের করা। এরপর স্বর্ণ-রূপার বিক্রয়মূল্য বের করা। যেসকল স্বর্ণ-রূপা নিয়মিত ব্যবহার করা হয় সেগুলোও এই হিসাবের মধ্যে আসবে। এরপর দৈনন্দিন থাকা-খাওয়া বাদে উদ্বৃত্ত থাকা ক্যাশ টাকার পরিমান বের করা। অতপর এই সবগুলোকে যোগ করে যদি ৫২-৫৫ হাজার টাকা বা এর বেশি হয় তাহলে আপনার উপর কুরবানি ওয়াজিব।
যাকাতের মত এই পরিমান সম্পদ ১ বছর সঞ্চিত থাকা শর্ত নয়।
এক পরিবারে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব হলে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কুরবানি আদায় করতে হবে। সবার পক্ষ থেকে একজন কুরবানি আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না। যৌথ পরিবার হলে বাবার সাথে অন্যান্য ছেলেরাও যদি সামর্থ্যবান হয় তাহলে শুধু বাবা কুরবানি করলে ছেলেদের কুরবানি আদায় হবে না। ছেলেদেরকেও আলাদা ভাবে কুরবানি করতে হবে। আবার ছেলের সংসারে থাকা বাবা-মা যদি সম্পদশালী না হন তাহলে বাবা-মায়ের উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না। ছেলে সম্পদশালী হলে ছেলের উপর ওয়াজিব হবে। স্বামী ও স্ত্রী যদি আলাদা আলাদা ভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হন তাহলে উভয়ের উপর আলাদা আলাদা কুরবানি ওয়াজিব হবে। স্বামী কুরবানি দিলে স্ত্রীর আদায় হবে না। বা স্ত্রী কুরবানি দিলে স্বামীর আদায় হবে না। যদি স্ত্রীর নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা অন্যান্য সম্পদ থাকে কিন্তু কুরবানি দেয়ার মত ক্যাশ টাকা না থাকে তাহলেও স্ত্রীর উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। স্বামী যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানি করেন তাহলে স্ত্রীর কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু স্বামী যদি তা দিতে অপারগ হন বা না দেন তাহলে যেভাবেই হোক স্ত্রীকে কুরবানি আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে সম্পদ বিক্রি করে হলেও কুরবানি দিতে হবে। অন্যথায় ওয়াজিব আদায় না করার জন্য কঠিনতম গুনাহের ভাগীদার হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্ত্রীর উপর কুরবানি ওয়াজিব হলে স্বামীর উপর সেটা আদায় করা বা স্ত্রীকে কুরবানির টাকা দেয়া স্বামীর উপর বাধ্যতামূলক নয়। স্বামী যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়ে দেয় তাহলে ভাল, কিন্তু না দিলে তার কোনো গুনাহ হবে না। আমাদের দেশে আমরা কথার কথা বলি টাকা পয়সা যা আছে সবই তো স্বামী-স্ত্রী দুইজনেরই! দুইজন আর আলাদা কী? ইসলাম তা বলে না। ইসলাম স্বামী ও স্ত্রীর আলাদা সম্পদের মালিকানার কথা বলে। তাই নামাজ-রোজার মত যাকাত, কুরবানি, হজ্জও সম্পদ থাকা সাপেক্ষে স্বামী-স্ত্রীর উপর আলাদা আলাদা ভাবে ফরজ হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরবানির মত এত সওয়াবের একটা আমল সঠিক ভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।